ঢাকা , শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫ , ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
সালমান এফ রহমানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা খরায় পুড়ছে চা-বাগান উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা ইফতারিতে দই-চিড়ার জাদু একরাতে দু’জনকে কুপিয়ে হত্যা এলাকায় আতঙ্ক স্বাভাবিক নিত্যপণ্যের বাজার, সংকট সয়াবিনে মামলা থেকে স্বামীর নাম বাদ দেয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ধর্ষণ ছেঁউড়িয়ায় শুরু লালন স্মরণোৎসব দোহাজারীতে বাসচাপায় ৩ জন নিহত হেনস্তার পর ছাত্রীকে ফেলে দিলো দুর্বৃত্তরা ৫৬০ মডেল মসজিদ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম ভ্যাট দেয় না বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরনের কাপড় টিভি ফ্রিজ খাট টাকা সব পুড়ে শেষ বস্তিতে আগুন ঢাকা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা বন্ধ পোশাক রফতানিতে প্রবৃদ্ধির রেকর্ড ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া শিশু গাজীপুরে উদ্ধার মাগুরার সেই শিশুটির শারীরিক অবস্থার অবনতি হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ডাক্তার দেখাতে না পেরে রোগীদের বিক্ষোভ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিমুখী চিকিৎসকদের পদযাত্রায় বাধা প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিলো পুলিশ

চোরাই চিনিতে সয়লাব বাজার

  • আপলোড সময় : ২০-০৫-২০২৪ ১০:২১:৩৯ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২০-০৫-২০২৪ ১০:২১:৩৯ পূর্বাহ্ন
চোরাই চিনিতে সয়লাব বাজার চোরাই চিনিতে সয়লাব বাজার
দেশে চিনিকল মালিকদের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির সুযোগে বাজার দখল করে নিয়েছে ভারতীয় চোরাই চিনিবর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে দেশি চিনির দর প্রতি কেজি ১৩০ টাকা নির্ধারিত থাকলেও মাত্র ৫৬ টাকাতেই মিলছে ভারতীয় চিনিখোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারতের খুচরা বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি চিনির দাম কমবেশি ৪০ রুপি, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৬ টাকাএকই চিনি বাংলাদেশে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকাদুই দেশে দামের এমন পার্থক্যের কারণে সীমান্ত দিয়ে প্রচুর ভারতীয় চিনি ঢুকছে বাংলাদেশেসেই চিনি রাতারাতি মোড়ক বদলে দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারেভারতীয় চিনিতে বাজার সয়লাব হওয়ার পেছনে দেশের চিনির মিল মালিকদের অস্বাভাবিক মুনাফা করার প্রবণতাকে পরোক্ষভাবে দায়ী বলে মনে করেন খুচরা ব্যবসায়ীদের কেউ কেউতারা বলছেন, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো দফায় দফায় দাম নির্ধারণ করেও সেই দামে চিনি বিক্রি করেনিএই অবস্থায় সীমান্তে শিথিলতার সুযোগে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় চিনি নিয়ে আসছে চোরাকারবারিরাসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে বিক্রি হওয়া ৬০ শতাংশ চিনিই ভারতেরগত ৪ মে নারায়ণগঞ্জের তারাব পৌরসভা থেকে ৬২৪ বস্তা ভারতীয় চিনি জব্দ করেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতউদ্ধার করা এসব চিনির ১৪৪ বস্তা ছিল মেঘনা গ্রুপের ফ্রেশ ব্র্যান্ডের মোড়কেবাকি ৪৮০ বস্তা ছিল ভারতীয় ব্র্যান্ডের মোড়কেএরপর ১৩ মে রাতে শেরপুরের নালিতাবাড়ী থেকে উদ্ধার করা হয় আরও ১ হাজার ২৯২ বস্তা ভারতীয় চিনিএভাবে দু-একদিন পরপর সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে ভারতীয় চোরাই চিনি
চট্টগ্রামে পুলিশ এবং র‌্যাবের পৃথক দুটি অভিযানে অন্তত এক হাজার মেট্রিক টন ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে ভারতীয় চিনি পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্যতাদের দাবি, মেহেরপুর-ঝিনাইদহ এবং কুমিল্লা-আখাউড়াসহ সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন ৫ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চিনি বাংলাদেশ ঢুকছেচোরাকারবারিদের আনা ভারতীয় চিনি দেশীয় ব্র্যান্ডের মোড়কে বাজার দখলে নেওয়ায় ব্যবসা হারাচ্ছেন ভোগ্যপণ্যের প্রকৃত ব্যবসায়ীরাচিনির আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেশুধু তা-ই নয়, চিনির আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে তারাবাংলাদেশে বছরে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা রয়েছেদেশের প্রতিষ্ঠিত ৬ থেকে ৮টি প্রতিষ্ঠান আমদানি করা কাঁচামাল পরিশোধন করে চিনি বাজারজাত করছেবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছিল ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬৫ টনঅথচ ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৯ টনসে হিসাবে চলতি অর্থবছরের উল্লিখিত ৩ মাসে ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৫ টন কম আমদানি হয়ব্যবসায়ীরা আমদানি কমিয়ে দেওয়ায় আরও সুযোগ পেয়েছে চোরাকারবারিরাসীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আনা চিনিতে বাজারের ঘাটতি মেটাচ্ছে তারাজানা গেছে, চোরাইপথে চিনির বড় একটি অংশ আসছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরসহ সিলেটের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়েপুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের চিনি ব্যবসায়ী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ভারতীয় চোরাই চিনির কারণে আমাদের ব্যবসা ৮০ শতাংশ কমে গেছে
এ বাজারের খুচরা চিনি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে বিক্রি হওয়া চিনি সিটি, মেঘনা ও ঈগলু কোম্পানির ব্যাগে বিক্রি হচ্ছেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রামপুরা বাজারের একজন মুদি ব্যবসায়ী গত শনিবার বলেন, চিনি চোরাইপথে আনলেও তা বোঝার উপায় নেইকারণ ভারত থেকে আনা চিনি দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বস্তায় আমাদের কিনতে হয়তখন কোনটা চোরাই তা বুঝার উপায় নেইমোল্লাবাড়ি বাজারের আরেক বিক্রেতা  বলেন, চিনি যেটা চোরাই সেটা পাইকারি দোকান থেকে আমরা খুচরা দোকানদাররা কম দামে কিনে থাকিযদিও খুচরা বিক্রেতারা অনেকেই কম দামে কিনলেও তা চড়া লাভেই বাজার দরে বিক্রি করেন
মেরাদিয়া বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী বেপারী সুগার এন্টারপ্রাইজ’-এর স্বত্বাধিকারী খালেক বেপারী গণমাধ্যমকে বলেন, কোনটা বৈধ আর কোনটা অবৈধ কেমনে বুঝবোসবই তো আমাদের কাছে আসে বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানির প্যাকেটেফ্রেশ, ঈগলু, দেশবন্ধু, এস আলমসহ বড় বড় কোম্পানির প্যাকেটে বাজারজাত করা হয়চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের মেসার্স সবুজ কমার্শিয়ালের মালিক মুহাম্মদ শাহেদ উল আলম বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য এই বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠছেএরা চোরাইপথে চিনি এনে আবার বড় বড় ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে থাকেএদের ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে পদক্ষেপ নেয়া হলেও তাদের সংখ্যা অনেকসম্প্রতি বাংলাদেশ সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা কামাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেয়া এক চিঠিতে চোরাই পথে ভারতীয় চিনি আসা বন্ধের আবেদন জানিয়েছেনচিঠিতে সারা দেশে তৎপর ৩৬ জন চোরাকারবারির তালিকাও দিয়েছেন তিনিতালিকায় যাদের চিনির চোরাকারবারি বলে দাবি করা হয়েছে তারা হলেন- ভৈরবের হাজি চান মিয়া ও রশিদ সরকার, বেলকুচির বাংলাদেশ বেকারি, উল্লাপাড়ার শহিদুল্লাহ, সিরাজগঞ্জের পদ্মারমুড়ের শেখ এন্টারপ্রাইজ ও ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, গৌরীপুরের আব্দুর রশিদ অ্যান্ড সন্স, রামগঞ্জের আবুল বাশার স্টোর, মাধবপুরের বেনু রায়, শেরপুরের চান মিয়া ও বিলু চৌধুরী, নেত্রকোনার দিলীপ ঘোষ, জয়পুরহাটের ফারুক ট্রেডার্স, ভরত প্রসাদ, ঠাকুরগাঁওয়ের রাধা মাধব অয়েল মিল, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সামাদ অ্যান্ড সন্স ও ভাই ভাই ট্রেডার্স, কুমিল্লার মোহনার সেলিম স্টোর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জাহাঙ্গীর স্টোর ও বিজয় পাল, চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ফারুক ব্রাদার্স, নবী স্টোর ও ইউনুছ, চট্টগ্রামের রাশেদ (ব্রোকার), ফেনীর ইসমাঈল ব্রাদার্স, বগুড়ার আনন্দকুণ্ড ও ভাই ভাই ট্রেডার্স, কাহালুর আরিফ স্টোর, বেলকুচির ভজন কুমার পাল, রংপুরের বণিক ব্রাদার্স, ময়মনসিংহের বিমল পাল, মৌলভীবাজারের মদনমোহন ভাণ্ডার, সিলেটের বিনীত রায়, আরতি এন্টারপ্রাইজ, হক ব্রাদার্স ও সাদ্দামএ বিষয়ে জানতে চাইলে সুগার রিফাইনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও দেশবন্ধু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম রহমান বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদনের পরও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নিআরও অবনতি হয়েছেস্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা চিনি চোরাচালান বন্ধে কাজ করছেনতাদের আবেদনের পরে অনেক জায়গায় ভারতীয় চিনি ধরা হচ্ছেবর্ডারেও অনেক ধরা হয়েছেপরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছেআমরা কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
প্রতিবেদকের তথ্য